এই প্রতীকী অনশনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, নিতাই রায় চৌধুরী ও বেগম সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, কবির মুরাদ, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান সালেহ প্রিন্স, সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু।
ফখরুল বলেন, ‘সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে, রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রেখে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করার ষড়যন্ত্র করছে। সরকারের উদ্দেশ্য একটাই, খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে বাইরে রেখে নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করা। আমরা দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে আহ্বান জানাই, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। এই স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। আন্দোলন ছাড়া এ সরকারের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো উপায় নাই।’
সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে, সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে।
ফখরুল বলেন, “বেগম খালেদা জিয়াকে আজকে সুচিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না, তার ন্যূনতম যে প্রাপ্য, সেই প্রাপ্যটুকু তাকে দেওয়া হচ্ছে না। এই সরকার তাকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র করছে। উদ্দেশ্য একটাই, বিএনপিকে নির্বাচন ও রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে রাখা।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে সব রাজনৈতিক ও পেশাজীবীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে এদেশের মুক্তির জন্য, ১৬ কোটি মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষের আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেবার জন্য, স্বৈরাচার সরকারের হাত থেকে দেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।” ফখরুল ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারসহ সারাদেশে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাদের মুক্তি দাবি করেন।
এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেব না। কারণ তিনি এদেশে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আজ তাঁকে কারাগারে রাখা হয়েছে, কারণ তিনি সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন।’
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারের এখন একটাই ষড়যন্ত্র, সেটি হলো খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বিএনপি ও ২০ দলকে বাইরে রেখে ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করার। কিন্তু দেশের জনগণ সেটি কখনই হতে দেবে না। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে তারপর নির্বাচনের চিন্তা করতে হবে।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তাই রাজপথে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।
কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আজ আমরা একটা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় নিয়ে এখানে প্রতীকী অনশনে অংশ নিয়েছি। পৃথিবীতে অনেক রাষ্ট্রনায়ককে কারাগারে যেতে হয়েছে এবং মুক্তি পেয়েছেন। আবার অনেকে আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু আমরা আজ অনশন করছি, যখন খালেদা জিয়া কারাগারে বন্দি। আর আমরা এখানে বন্দি অবস্থায় অনশন করছি।’
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, ‘কারাগারে খালেদা জিয়া থাকবেন, এটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তিনি তাঁর সুচিকিৎসা তো পাবেন, সেটা তাঁকে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে এমন জায়গায় রাখা হয়েছে, যেখানে একটু পরপর বিদ্যুৎ চলে যায়। অথচ জেলে আমরা যারা ছিলাম, দেখেছি বিদ্যুৎ গেলে সাথে সাথে জেনারেটর চলে আসত। কিন্তু খালেদা জিয়ার বিষয়ে সেটা করা হচ্ছে না। এভাবে খালেদা জিয়াকে তিলে তিলে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমরা আইনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার চেষ্টা করছি। উচ্চ আদালত খালেদা জিয়াকে জামিন দিলেও নিম্ন আদালত, সরকারের নির্দেশে সেটি বাতিল করছে। খালেদা জিয়ার মামলায় উচ্চ আদালত দ্রুত শুনানির নির্দেশ দিলে নিম্ন আদালত শুনানি করছে ঠিকই, কিন্তু জামিন বাতিল করছে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য শেষে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী তাঁকে ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান।