• রবিবার, ২৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১১ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
দক্ষিণ আফ্রিকায় শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল সভাকে ঘিরে ত্রিমুখী উত্তেজনা; পাল্টাপাল্টি হু-ম-কি এক দশক পর বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে সাউথ আফ্রিকার পাসপোর্টের মান বাড়লো; পাঁচ ধাপ এগিয়েছে কেপটাউনে বাংলাদেশী মেয়ের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল: ডাক্তার হতে চায় মরিয়ম মুনির দক্ষিণ আফ্রিকায় মালবাহী ট্রাকে গু-লি করে প্রবাসী বাংলাদেশীকে হ-ত্যা চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন খালেদা বেগম দ. আফ্রিকায় ই-পাসপোর্ট কি ফেব্রুয়ারীতে? জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য দূতাবাসের আবেদন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অপেক্ষমান ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার হোম এফেয়ার্স ঢাকায় দক্ষিণ আফ্রিকার ভিসা সেন্টার চালুর জোরালো অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ আফ্রিকার দেশ সোয়াজিল্যান্ডে বিএনপি’র উদ্যোগে বিজয় দিবস উদযাপন দ.আফ্রিকায় স্পাজা শপ রেজিষ্ট্রেশন: ঘাউটেং প্রভিন্সে ১৩ হাজার আবেদন, বন্ধ করা হয়েছে ৫৪১টি
প্রবাসী খবরঃ
কেপটাউনে বাংলাদেশী মেয়ের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল: ডাক্তার হতে চায় মরিয়ম মুনির দক্ষিণ আফ্রিকায় মালবাহী ট্রাকে গু-লি করে প্রবাসী বাংলাদেশীকে হ-ত্যা চলচিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি পেলেন খালেদা বেগম দ. আফ্রিকায় ই-পাসপোর্ট কি ফেব্রুয়ারীতে? জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির জন্য দূতাবাসের আবেদন বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে অপেক্ষমান ভিসার মেয়াদ বাড়িয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার হোম এফেয়ার্স কেপটাউনে বিএনপির উদ্যোগে ঐতিহাসিক বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন পথিমধ্যে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত সাউথ আফ্রিকা প্রবাসীর মৃ ত্যু দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে হৃদরোগে প্রবাসী বাংলাদেশীর মৃত্যু সাউথ আফ্রিকায় আগুনে পুড়ে ঘুমন্ত দুই বাংলাদেশীর মৃত্যু; কমিউনিটিতে শোকের ছায়া অবশেষে মানিক সহ ছবির চার জনের তিনজনই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন

বাড়ির নিচে গুপ্তধন!

Reporter Name / ৩৭২ Time View
Update : বৃহস্পতিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৮

রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর সেকশনের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়ি। অস্ত্রসহ দাঁড়িয়ে গতকাল বুধবার বাড়িটি পাহারা দিচ্ছিলেন পুলিশের চার সদস্য। আশপাশের উৎসুক লোকজনের দৃষ্টি ছিল বাড়িটির দিকে। গত এক সপ্তাহে মিরপুরে গুঞ্জন ছড়ায়, ওই একতলা বাড়ির মাটির নিচে লুকানো রয়েছে ‘গুপ্তধন’। স্বর্ণালঙ্কার ও দামি নানান জিনিসপত্র সেখানে রয়েছে। গুঞ্জনের পালে হাওয়া লাগে যখন আবার পুলিশ দিনরাত বাড়িটি পাহারা দেওয়া শুরু করে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, দূর-দূরান্ত থেকে গুপ্তধন থাকা বাড়িটি দর্শন করতে অনেকে আসছেন। শেষ পর্যন্ত গুপ্তধনের রহস্য উন্মোচন করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে মিরপুর থানা পুলিশ। আগামী শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ওই বাড়ি খোঁড়ার কথা রয়েছে। স্থানীয়দের কেউ কেউ মনে করেন, কোটি টাকা মূল্যের বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা বলে দখল, হাতবদলের চেষ্টা করছে একটি পক্ষ।

জানা যায়, ১৪ জুলাই বাড়িটির বর্তমান মালিক দাবিদার মনিরুল আলম মিরপুর থানায় একটি জিডি করেন। সেখানে তিনি বলেন, তার বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে বলে এলাকার লোকজনের মধ্যে জনশ্রুতি রয়েছে। এ কারণে বাড়িটির সামনে প্রতিদিন লোকজন ভিড় করছে। যে কোনো সময় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বাড়িটি দুই কাঠা জমির ওপর নির্মিত। আপাতত কোনো ভাড়াটিয়া নেই। একজন নিরাপত্তারক্ষী বাড়িটি দেখভাল করেন। যেহেতু জনশ্রুতি আছে বাসার মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, তাই বাড়ি খননে তার কোনো আপত্তি নেই। খননের খরচও তিনি বহন করবেন। যদি গুপ্তধন পাওয়া যায়, তাহলে তা বেওয়ারিশ সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বিধি মোতাবেক তা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। জিডির কথা উল্লেখ করে পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে চিঠি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয়েছে, বিষয়টি স্পর্শকাতর। তাই এ ঘটনার সত্যাসত্য যাচাই ও এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বাড়িটি খনন করা প্রয়োজন।

আরও জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ সদরের বাসিন্দা তৈয়ব নামে এক ব্যক্তি মিরপুর থানায় আরও একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনিও ওই বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা জানান। তৈয়ব গতকাল সমকালকে বলেন, মিরপুরের ওই বাড়ির মূল মালিক দিলশাদ খান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তান চলে যান। দিলশানের দূরসম্পর্কের আত্মীয় সৈয়দ আলম তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আলমও পাকিস্তানে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। আলম তাকে তথ্য দেন, মিরপুরের ওই বাড়িটির নিচে দুই মণের বেশি স্বর্ণালঙ্কার ও দামি জিনিসপত্র রয়েছে। পাকিস্তানে থাকাকালে আলমকে ওই তথ্য দেন দিলশাদ। এরপর আলমকে নিয়ে তৈয়ব মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা এ সম্পদ দখলে নিতে টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর তৈয়বকে আড়ালে রেখে গোপনে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সঙ্গে আঁতাত করেন আলম। তারা মাটির নিচের সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পাঁয়তারা করেন। বিষয়টি টের টেয়ে তিনি তার পূর্ব পরিচিত রাবেয়া চৌধুরী নামে এক নারীকে নিয়ে থানায় যান। তারা বিষয়টি জানিয়ে জিডি করার সিদ্ধান্ত নেন। কীভাবে বিশ্বাস করলেন ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে- এমন প্রশ্নে তৈয়ব বলেন, আলম এমন কিছু তথ্য-উপাত্ত দেখিয়েছে, তাতে আমার শতভাগ বিশ্বাস- ওই বাড়ির নিচে মহামূল্যবান ধন রয়েছে। যাতে কোনো ব্যক্তি এটা ভোগদখল করতে না পারে তাই পুলিশকে জানানো হয়েছে।

গতকাল মিরপুরের ওই বাড়িটির আশপাশের অনেক বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, পাঁচ-ছয়বার হাতবদলের পর বাড়িটির বর্তমান দখলদার মনিরুল আলম। তিনি বাড়িটিতে থাকেন না। এমনকি বছরখানেক ধরে ভাড়াটিয়াও নেই ওই বাড়িতে। আট কক্ষের বাড়িতে সুমন নামে মালিক পক্ষের এক যুবক অবস্থান করছিলেন। সুমন জানান, এক সপ্তাহ ধরে শত শত লোক বাড়িটি দেখতে আসছে। সবাই বলাবলি করছে- বাড়িটির মাটির নিচে গুপ্তধন রয়েছে।

জানা যায়, যে পক্ষ থানায় গিয়ে দাবি করেছে ওই বাড়ির নিচে গুপ্তধন রয়েছে, তারা কক্সবাজার ও ঢাকায় জমি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত। কোনো পক্ষের হয়ে তারা বাড়িটি কৌশলে দখলে নেওয়ার অপচেষ্টা করছে কি-না তা খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন স্থানীয়দের কয়েকজন।

বাড়িটির মূল তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, আড়াই বছর ধরে বাড়ির মূল মালিকের সঙ্গে তার দেখা নেই। শহীদুল্লাহ নামে মালিকের এক ঘনিষ্ঠ লোকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখেন। বাড়ির ভালোমন্দ সব কিছু তাকে জানান। শহীদুল্লাহ পুলিশের সদস্য বলেও জানান তিনি। তবে শহীদুল্লাহর নম্বরে যোগাযোগ করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। শফিকুল ইসলাম আরও জানান, টিনের চালা নষ্ট হয়ে পড়ায় বছরখানেক ধরে কোনো ভাড়াটিয়া নেই। বাড়িটি মালিক ঠিকঠাকও করেননি।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মাসুদ আহম্মেদ বলেন, দুই পক্ষ বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা জানিয়ে জিডি করায় পুলিশ আদালত ও প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানায়। এরই মধ্যে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লোকজন বাড়িটি পরিদর্শন করেছে। তারা প্রাথমিকভাবে বলেছে, সেখানে কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ নেই।

এ ঘটনায় দায়ের করা জিডির তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আরিফুর রহমান বলেন, গুপ্তধন থাকার বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় যাতে সেখানে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই সার্বক্ষণিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে মাটি খোঁড়া হবে।

স্থানীয় কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিক বলেন, ওই বাড়িটি পরিত্যক্ত সম্পত্তি। পরে কেউ তা নামজারি করে মালিকানা পেয়েছে কি-না তা জানা নেই। দুই পক্ষই বাড়ির ব্যাপারে আমার কাছে এসেছিল। এরপর তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দেন। কক্সবাজার থেকে যে পক্ষটি বাড়িতে গুপ্তধন থাকার কথা বলে যোগাযোগ করেছিল, তাদের উদ্দেশ্য ভালো মনে হয়নি স্থানীয় কাউন্সিলরের। গুপ্তধন থাকার বিষয়টি হাস্যকর বলে তিনি মন্তব্য করেন।

রাবেয়া চৌধুরী বলেন, বাড়িটির মালিক বিমানের সাবেক কর্মকর্তা দিলশাদ খান। তার ছেলেমেয়েরা কয়েকবার বাবার বাড়ি উদ্ধার করতে গেলেও পারেননি। মনিরুল জোরপূর্বক বাড়িটি দখল করে রেখেছে। এবার দিলশাদের লোকজন পুলিশকে ঘটনাটি জানালে তারা রহস্যজনক আচরণ শুরু করেছে। বাড়ি নিয়ে যা ঘটছে তার সবকিছুই নাটক। দিলশাদের লোকজন বাড়ি দখলে না নিতে পারলে মনিরুলকে থাকতে দেওয়া হবে না। বরং সরকার সেটা দখলে নিক।

বাড়িটির মূল মালিকের আত্মীয় দাবিদার সৈয়দ আলমের মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে নূরজাহান নামে এক নারী ফোন ধরে বলেন, সৈয়দ বাড়ির বাইরে রয়েছে। বাড়িটির বর্তমান মালিকানা দাবিদার মনিরুল আলমের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


রিলেটেড খবর
bdit.com.bd