দারুল উলূম জাকারিয়া দক্ষিণ আফ্রিকার লেনাসিয়ায় অবস্থিত একটি প্রখ্যাত ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৮১ সালে শায়খুল হাদীস মাওলানা মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভী (রহ.) দক্ষিণ আফ্রিকা সফর করেন। সেই সময় কিছু মুসলিম ভাই তাকে একটি উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠার জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করেন। এই দোয়া বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে ১৯৮৩ সালে লেনাসিয়ার উপকণ্ঠে ২৪ একর কৃষিজমি কিনে দারুল উলূম জাকারিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে অত্যন্ত সুনামের সাথে পাঠদান করায় প্রতিবছর ছাত্রদের সংখ্যা বাড়ছে। ছাত্র এবং ছাত্রীদের জন্য পৃথক ক্যাম্পাস ও হোস্টেল সুবিধা রয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকা ছাড়াও বাংলাদেশ ও ভারত থেকে ছাত্ররা এসে এখানে পড়াশুনা করছেন। এবং তারা উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
বর্তমানে ১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন যার মধ্যে ২০ জনের অধিক বাংলাদেশী ছাত্ররা অধ্যয়নরত।
Zakaria Campus
যাত্রা শুরু-
প্রতিষ্ঠার প্রথম বছরে, ভারতের পানোলির কারি আবদুল হামিদ সাহেব প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন ৩৫ জন ছাত্র ছিল, এবং পর্যাপ্ত সুবিধার অভাবে কিছু ছাত্র গাছের নিচে পাঠ গ্রহণ করত। পরবর্তী বছরে ছাত্রসংখ্যা ১০০-তে পৌঁছায় এবং ৬ জন শিক্ষক ও ৬টি শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা হয়। ১৯৯১ সালে প্রথম দারুল হাদীস শ্রেণি চালু হয়, যার আগে ছাত্ররা ইন্দো-পাক উপমহাদেশে পড়াশোনা সম্পন্ন করতে যেত। সেই বছরই প্রথম ১৩ জন আলেম প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হন।
মসজিদ
প্রথমদিকে মসজিদ না থাকায় ছাত্ররা একটি মুসাল্লায় নামাজ আদায় করতেন। ১৯৯২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি দারুল উলূমের মসজিদ উদ্বোধন করা হয়। মসজিদের উদ্বোধনী জুমার নামাজ পরিচালনা করেন মসজিদে নববির ইমাম শায়খ আলি বিন আবদুর রহমান আল-হুযাইফি। মুফতি মাহমুদ হাসান গাঙ্গোহি সাহেব (রহ.) রমজান মাসে প্রথম ইতিকাফ পালন করেন। সেই রমজানের শেষ দশ দিনে ৫০০ জনেরও বেশি ব্যক্তি ইতিকাফে অংশগ্রহণ করেন।
রাতের ক্যাম্পাস
মাদরাসার অবকাঠামো-
বছরের পর বছর শুভানুধ্যায়ীদের অনুদানে একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন, হিফজুল কুরআন বিভাগ, রান্নাঘর, ডাইনিং হল এবং লন্ড্রি নির্মিত হয়। আরও ২০ একর জমি দান করা হয়, যেখানে নতুন আবাসিক সুবিধা নির্মাণ করা হয়।
শাখা প্রতিষ্ঠান-
২০০০ সালে ১৩ কিমি দূরে আইকেনহফে একটি শাখা খোলা হয়, যেখানে প্রায় ১০০ জন তরুণ হিফজ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন। সম্প্রতি মানডানে – সোয়েটোতে একটি মক্তব খোলা হয়েছে, যা স্থানীয় দরিদ্র জনগণের ধর্মীয় ও কল্যাণমূলক চাহিদা পূরণ করে।
পরিসংখ্যান (এপ্রিল ২০১৯ পর্যন্ত)
ইতিমধ্যে যারা বিভিন্ন ক্লাসে উত্তীর্ন হয়েছেন-
* হাফেজ: ১২৭০ জন
* আলেম: ১১৫৫ জন
* রিওয়ায়াতে হাফস: ৫১৭ জন
* কিরাআত সাবআহ: ২৫৫ জন
* কিরাআত আশারাহ: ৬৩ জন
* ইফতা গ্র্যাজুয়েট: প্রায় ৮০ জন
যে সকল ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গ মাদরাসাটি পরিদর্শন করেছেন-
বছরের পর বছর ধরে দারুল উলূম জাকারিয়া অনেক প্রখ্যাত আলেমের আগমন ঘটেছে; তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন-
* মুফতি আহমদুর রহমান সাহেব (রহ.)
* মুফতি ওয়ালি হাসান সাহেব (রহ.)
* মাওলানা মুহাম্মদ ইউসুফ লুধিয়ানভী সাহেব (রহ.)
* শায়খ আবদুর রহমান আস-সুদাইস
* শায়খ আবদুল বারি থুবাইতি
* শায়খ সালেহ বিন হুমাইদ
* মুফতি রফী উসমানী সাহেব
* মুফতি তাকী উসমানী সাহেব
* মাওলানা আর্শাদ মাদানী সাহেব
আমাদের দোয়া, আল্লাহ তা’আলা এই প্রতিষ্ঠানের সকল প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং এটিকে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ করুন। আমীন।
– লেখক:
মাওলানা কবীর হোসাইন
বাংলাদেশী শিক্ষার্থী, দারুল উলূম জাকারিয়া